কারাগারে কর্মসংস্থান : সংসারে টাকা পাঠাচ্ছেন বন্দীরা

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা: কারাগারে থেকেও সংসার চালাতে টাকা পাঠাচ্ছেন বন্দীরা। কেউ আবার জমা রাখছেন নিজের ভবিষ্যতের জন্য। যাতে করে কারামুক্তির পর সেই টাকা দিয়ে কিছু একটা করে জীবন চালাতে পারেন। আত্মশুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চলছে এমন নানামুখী কার্যক্রম। বন্দীদের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারাগারে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন কারখানা, মিনি গার্মেন্ট, শিক্ষালয়সহ নানা কর্মক্ষেত্র। এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে তার ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হচ্ছে কাজের সাথে সম্পৃক্ত বন্দীদের। যাতে করে জেল থেকে ফিরে তাকে হতাশায় ভুগতে না হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারে ‘রেনেসাঁস’ নামক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কম্পিউটার, দর্জি, গার্মেন্ট, তাঁত শিল্প, জামদানি বেনারসি ও কাতান শাড়ি তৈরি, পাদুকা তৈরি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। একই সাথে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। এছাড়াও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, মিউজিক শিক্ষা, জেন্টস পার্লার, হস্ত ও সূচি শিল্প, শোপিস তৈরি, কৃষি ও গবাদি পশুপালন ইত্যাদি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বন্দীর মধ্যে প্রায় এক হাজার বন্দী এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত।

জানা গেছে, কারাগারের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, নারী-পুরুষ শিশুদের জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারে বিক্রি হয়। এসব পণ্য থেকে আয়ের একটি বড় অংশ (সরকারি নিয়ম অনুযায়ী) পারিশ্রমিক হিসাবে বন্দীদের দেয়া হয়। যা তারা পরিবারের খরচের জন্য পাঠিয়ে থাকেন। আবার অনেকে টাকা জমা রাখছেন। পরে জেল থেকে বের হয়ে ওই টাকা দিয়েই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন। সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার ঘোষ নয়া দিগন্তকে বলেন, কারাগার নিয়ে মানুষ একটি নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে থাকে। উন্নত দেশগুলো এখন কারাগারকে সংশোধোনাগারে পরিণত করছে। কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়া জেনারেল এ এস এম আনিসুল হকের নেতৃত্বে আমরাও সেটাই করছি। তিনি বলেন, বন্দীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে কারাগার থেকে ফিরে তারা কাজ করে খেতে পারেন। এছাড়া প্রশিক্ষিত বন্দীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি চাকরি প্রদান, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অপরাধী পুনর্বাসন সমিতিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা দিয়ে সেলাই মেশিন, রিকশা, ভ্যান কিনে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে রয়েছে মিনি গার্মেন্ট, জুতা তৈরির কারখানা, হস্তশিল্পসহ ছোট বড় কয়েকটি কারখানা। এখানে তৈরি পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। এখান থেকে আয়ের প্রায় ৫০ ভাগ লভ্যাংশ দেয়া হচ্ছে ওই বন্দী শ্রমিককে।

তিনি বলেন, বন্দীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য গণশিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদকাসক্তি, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ বিরোধীসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাদের আত্মোপলব্ধির জন্য মেডিটেশনও চলছে। বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন খেলাধুলা টেলিভিশন, বিনোদন ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনী উপভোগ করার ব্যবস্থা। রয়েছে বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পত্রিকা, ম্যাগাজিন পাঠ এবং পাঠাগার ব্যবস্থা। তিনি বলেন, সবাই দাগি আসামি নয়। অনেক ভালো শিক্ষিত ব্যক্তিও কারণবশত কারাগারে আসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা প্রশিক্ষিক হিসেবে কাজ করে থাকেন।
সুভাষ কুমার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জেলও বসে নেই । তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে এবং কারাগারের দিকে আর একটু সুনজর দিলে খোলস পাল্টে দ্রুতই সংশোধনাগারে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা রাখে বলে মনে করেন কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com