উত্তরে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

রংপুর: উজানের ঢল আর বৃষ্টিতে উত্তরের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমরের পানি। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন অন্তত ৫০ হাজার পরিবার। সঙ্কট দেখা দিয়েছে শুকনা খাবারের। সরকারি তরফে তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি লালমিনরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে নয় সেন্টিমিটার, তালুকশিমুলবাড়ি পয়েন্টে ২১, এবং দুধকুমরের পানি কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি কুড়িগ্রামের নুন খাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে, আত্রাই করতোয়া নদীর পানি দিনাজপুরের ভুষিরবন্দর, পূনর্ভবার পুলহাট, ফুলবাড়ি পয়েন্টে ইসামতি, করতোয়ার পানি পঞ্চগড়, টাঙ্গনের পানি ঠাঁকুরগাঁও পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার বেলা ৩টায় ভারতের গাজলডোবা পয়েন্টে পানির লেভেল ছিল ১০৮ সেন্টিমিটার এবং দোয়ানী পয়েন্টে ৮৫ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার।

তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামে ১০১, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক তিন, ঠাঁকুরগাঁওয়ে ৪৫ দশমিক ছয়, পঞ্চগড়ে ৪০ এবং রংপুরে ৩৬ দশমিক আট মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জি মেঘালয়েরর চেরাপুঞ্জিতে ২০০, অরুনাচলের পাসিঘাটে ৫৩, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৩৩, শিলিগুড়িতে ১১০ এবং সিকিমের গ্যাংটক ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজান থেকে পানির ঢল নেমেছে। ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টের ৪৪টি কপাট খুলে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানিও সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদ-নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে ভাটিতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

এদিকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ার নোহালী, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, লক্ষিটারী, মর্নেয়া এবং গজঘণ্টা ইউনিয়ন, কাউনিয়ার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, পীরগাছার তাম্বুলপুর, ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তা বেষ্টিত চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কোথাও কোথা হাটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর। চরের উঠতি পাট, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। উপচে গেছে পুকুর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। জরুরী ভিত্তিতে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য শুকনা খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

রংপুরের ডিসি ড. চিত্রলেখা নাজনীন জানিয়েছেন, বন্যা এবং ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় আমরা কাজ করছিল। মাঠ প্রশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কবলিতদের তালিকা তৈরি করছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড আমাদের রয়েছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে সেগুলো বিতরণ শুরু হবে শিগগিরই।

এদিকে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের অভিযোগ করেন, তারা তিন দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি তারা।

অন্যদিকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা বেস্টিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। এসব এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিম্ন

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ দিয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক আছি। পানিবন্দিদের তালিকা তৈরির কাজ শেষের পথে। তাদেরকাছে পৌঁছে যাবে সরকারি সহযোগিতা।

এদিকে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সেখানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলার নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদের বাঁধ উপচে প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, চিলমারী, উলিপুর, সদর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও ভুরুঙ্গামারীসহ বন্যায় যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে এসব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৬০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তালিকা ধরে ধরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে, বন্যা কবলিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করছে মাঠ প্রশাসন।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, সার্বক্ষণিকভাবে বন্যা ও ভাঙ্গন এলাকাসমুহ তদারকি করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় তার বন্যাকবলিত মানুষের ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন। যখন যা প্রয়োজন হবে, তখন তা পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি আবহাওয়া অনুযায়ী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোর মানুষকে উচু স্থান এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com