যেসব অভ্যাসে মেরুদণ্ডের ক্ষতি

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বাস্থ্য ডেস্ক : আপনি কিভাবে দাঁড়ান, কীভাবে বসেন ও কীভাবে শুয়ে থাকেন তা আপনার মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। শারীরিক ভঙ্গি ভালো হলে সমস্যা নেই, বরং উপকারই হয়। কিন্তু শারীরিক ভঙ্গিতে ত্রুটি থাকলে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে জয়েন্টের সবচেয়ে জটিল সেট হলো মেরুদণ্ড। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বেশিরভাগ মানুষই পিঠে ব্যথা অনুভব না করা পর্যন্ত মেরুদণ্ডের প্রতি যত্নশীল হন না।

স্নায়ুর ক্ষতি, জয়েন্টের ক্ষয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষতি এড়াতে মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আমাদের প্রতিদিনকার কিছু অভ্যাস মেরুদণ্ডকে আঘাত করে ও পিঠ ব্যথায় ভুগিয়ে থাকে। মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে এমন কিছু অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* ব্যায়ামের ধরন:
ওজন কমানো ছাড়াও ব্যায়াম স্বাস্থ্যের বহুবিধ উপকার করে থাকে। কিন্তু কোন ধরনের ব্যায়াম করছেন অথবা করছেন না তার ওপর ভিত্তি করে আপনার মেরুদণ্ড ভঙ্গুরপ্রবণ হতে পারে। প্রথমে ভালো খবর দিয়ে শুরু করা যাক: ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের রিউম্যাটলজি বিভাগের প্রধান ডেভিড পিসেতস্কাই বলেন, ‘ওয়েট-বিয়ারিং ব্যায়াম মেরুদণ্ড ও শরীরের অন্যান্য স্থানে হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে পারে। এছাড়া শরীরের মধ্যভাগে প্রভাব ফেলে এমন ব্যায়াম করলে পিঠ ও মেরুদণ্ড সংশ্লিষ্ট মাংসপেশি শক্তিশালী হয়। ইন্টারন্যাশনাল অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশন প্রতিসপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করতে পরামর্শ দিয়েছে, যেখানে ওয়েট-বিয়ারিং ব্যায়ামও থাকবে।

এখন খারাপ খবর- কিছু জনপ্রিয় ব্যায়াম (যেমন- সাইক্লিং ও স্পিন ক্লাস) পিঠ ও ঘাড়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে অথবা বিদ্যমান মৃদু সমস্যাকে তীব্র করতে পারে। এর কারণ হলো, রাইডাররা বাইকে দীর্ঘসময় শরীর বাঁকিয়ে বসে থাকে। পিঠ বা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার আরেকটি কারণ হলো, মোটেই ব্যায়াম না করা। ব্যায়াম না করলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।

* ধূমপান:
আপনি এটা ভেবে অবাক হতে পারেন যে ধূমপানে মেরুদণ্ডের ক্ষতি হবে কিভাবে? কিন্তু সত্য এটাই যে ধূমপানের অভ্যাসও মেরুদণ্ডকে ড্যামেজ করতে পারে, বলেন লিনক্স হিল হসপিটালের অর্থোপেডিক স্পাইন সার্জন নাথানিয়েল টিন্ডেল। তিনি আরো বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষই এটা অনুধাবন করেন না যে ধূমপান হাড়কে প্রভাবিত করে ও অকালে স্পাইনাল ডিস্কের ক্ষয় ঘটাতে পারে।’ ধূমপানে স্পাইনাল ডিস্কে সার্কুলেশন বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে এটি পানিশূন্য হয়ে পড়ে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণে ব্যর্থ হয়। এই ডিস্কের সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চলাফেরার সময় চাপ ও আঘাত শুষে নেয়। ধূমপানে ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজের পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসেরও ঝুঁকি বাড়ে।

* দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়া:
হাড়ের সুস্বাস্থ্যে ক্যালসিয়ামের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো দুগ্ধজাত খাবার। কিন্তু ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না বলে তথা পেটফাঁপা, গ্যাস ও ডায়রিয়া হওয়ার কারণে অনেকেই দুগ্ধজাত খাবার খেতে চান না। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটে দুধ জাতীয় খাবার না রাখলে হাড়ের ভোগান্তি বাড়ে। আপনি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না খেলে আপনার শরীর কোষের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেবে, যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যাবে অথবা অস্টিওপোরোসিস হবে। দুগ্ধজাত খাবার ছাড়াও ক্যালসিয়ামের আরো কিছু ভালো উৎস হলো- সবুজ শাকসবজি, নরম হাড়ের মাছ ও ক্যালসিয়াম ফর্টিফায়েড খাবার। বয়স ৫০ এর মধ্যে হলে প্রতিদিন ১,০০০ মিলিগ্রাম এবং তদোর্ধ্ব হলে ১,২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে।

* ত্রুটিপূর্ণ শারীরিক ভঙ্গি:
নিউ ইয়র্ক সিটির ইয়োগা ইন্সট্রাক্টর লরেন হ্যারিস বলেন, ‘বয়স বাড়লে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে ও মেরুদণ্ডকে চাপে রাখে। শারীরিক ভঙ্গিতে ত্রুটি থাকলে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়।’ এর সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শরীরকে সোজা রেখে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কমাতে পারেন। বসলে বা দাঁড়ালে বুক যেন নিচে না নামে অথবা কান যেন কাঁধের নিকটবর্তী না হয়।’ তিনি আরো জানান, ‘মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বাড়ায় এমন ইয়োগাও এই চাপ কমাতে বিশেষ কার্যকর হতে পারে। এছাড়া শরীরের মধ্যভাগের উন্নয়নে প্রচলিত ব্যায়ামও মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দিতে পারে।’ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা সহজেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা বসতে পারেন। পিঠ ব্যথার ইয়োগা করলে ফিজিক্যাল থেরাপির মতোই উপকার পাওয়া যেতে পারে।

* সানস্ক্রিনের অতি ব্যবহার:
এখনো পর্যন্ত স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ও ত্বকে অকাল বয়স্কতার ছাপ প্রতিরোধে সানস্ক্রিনের ব্যবহারই সর্বোত্তম উপায়। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সানস্ক্রিন মাখলে আমরা ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হতে পারি। আমাদের শরীর সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভিটামিন ডি তৈরি করে, কিন্তু অতিরিক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। শরীরে ক্যালসিয়াম শোষিত হতে ভিটামিন ডি লাগে। কিন্তু খাবার থেকে তেমন একটা ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না। একারণে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পেতে দিনের কিছুসময় রোদে থাকা উচিত। ডা. পিসেতস্কাই বলেনই, ‘রোদে ত্বক পুড়তে না চাইলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সানস্ক্রিন প্রয়োগের পূর্বে ১৫ মিনিট ত্বককে সূর্যালোকের সংস্পর্শে রাখা ভালো।’ কেবল ত্বকের কথা ভাবলে হবে না, হাড়/মেরুদণ্ডের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। মেরুদণ্ডের প্রতি যত্নশীলতার একটি উপায় হলো, শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি নিশ্চিত করা।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com