ঢাকা; পদ্মা নদীর উপরে সেতু হবে এটা এক সময়ে মানুষের কল্পনাতে ছিলো। সময়ের পরির্বতে অল্প কিছুদিন পরেই খুলতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। তবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু পার হতে লাগবে বড় অঙ্কের টোল। সেতু বিভাগের নির্ধারণ করা টোলের হার অনুসারে, বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
বাংলার ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৯৫ শতাংশ। আর পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু চালু হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চলেরর ২১ জেলা। তবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এ সেতু পার হতে লাগবে বড় অঙ্কের টোল।
প্রস্তাবিত টোলহার: পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট (দুই প্রান্তের উড়ালপথ) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর সময় টোলের হার ছিল বেশ কম। ২০১১ সালে এবং সর্বশেষ গত বছর টোল বাড়ানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোলহার বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় দ্বিগুণ।
বর্তমানে পদ্মা নদী পার হতে ফেরিতে যানবাহনভেদে ভাড়া দিতে হয় ৭০ থেকে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। প্রস্তাব অনুসারে পদ্মা সেতুতে যানবাহনভেদে টোল দিতে হবে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা (ফেরিতে ৫০০ টাকা), বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৫৮০ টাকা), মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৮৫০ টাকা)। মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) ভাড়া ফেরিতে নির্ধারণ করা নেই। বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই শ্রেণির ট্রেইলারের টোল তিন হাজার টাকা। পদ্মা সেতুতে তা ৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত টোলহার সেতু চালুর ১৫ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে। প্রতি ১৫ বছর পরপর টোলের হার ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
পদ্মা সেতু দিয়ে কত যানবাহন চলাচল করবে এর পূর্বাভাস আগেই ঠিক করা হয়েছে। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে সেতু চালুর হিসেবে দিনে প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করার কথা ছিল। ৩৫ বছর পর যানবাহনের সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
আয় থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলেও এর ব্যয়ের টাকা ঋণ হিসেবে সেতু কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতুর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সেতু কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ নিজেদের আয়ে চলবে প্রতিষ্ঠানটি। পদ্মা সেতুর জন্য নেওয়া ঋণ ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ফেরত দিতে হবে সেতু কর্তৃপক্ষকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু করার উল্লেখ রয়েছে।