শিশু অপহরণ করে অনলাইনে বিক্রি করতেন তারা!

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩

ঢাকা: পিযূষ কান্তি পাল (২৯) ও রিদ্ধিতা পাল (২৫), সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। এই দম্পতি দৃশ্যত কোনো কাজ করেন না। কিন্তু এদের মূল কাজ হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শিশু অপহরণ করে বিক্রি করা। এজন্য তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। সুযোগ পেলে এক পর্যায় কোনো শিশুকে চকলেট ও খাবারের অফার করে। কেউ রাজি হলে তাকে খাবারের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসতেন। এরপর শিশুটিকে কোনো বাসায় রেখে অনলাইনে শিশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন এই দম্পতি। এতে কেউ সাড়া দিলে মোটা অংকের টাকায় সেই শিশুকে বিক্রি করতেন তারা। গত কয়েক বছর থেকে এ কাজ করে আসছিল এ দম্পতি।

গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে সিদ্দিক নামের তিন বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে বিক্রির করেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে অভিযান চালায় র‍্যাব। ঘটনার ২৪ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সেই শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি শাহবাগ ও গোপালগঞ্জ থেকে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন— অপহরণকারী পিযূষ কান্তি পাল (২৯), সহযোগী ও স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), শিশু বিক্রির মধ্যস্থতাকারী সুজন সুতার (৩২), শিশু ক্রেতা পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবি সরকার (৪৬)।

শুক্রবার (১৯ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।

তিনি জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে আম ও চকলেট কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশুকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা শিশু অপহরণ করে অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। এই শিশুকেও অপহরণ করে তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তা দেখে এক দম্পতি তাদের কাছ থেকে মাত্র দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের শিশুটিকে কিনে নেয়। শিশুটিকে কিনে নেওয়া দম্পতির বাড়ী গোপালগঞ্জে।

pacharযেভাবে শিশু সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়েছিল

র‍্যাব জানায়, গত ২৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন ঢাকা উদ্যান, সি ব্লকের ১নং রোডের ১২ নম্বর বাসার সামনের রাস্তায় দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিক (৩)’সহ আরও শিশুরা খেলছিল। এসময় এক ব্যক্তি এসে তাদের চকলেট খাওয়ায়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলেন, তুমি বাসায় চলে যাও, আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব। বড় মেয়ে যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলে। আর সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার বড় মেয়ে হুমায়রা ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় চলে যায় এবং বিষয়টি বাড়ির লোকজনকে জানায়। এরপর শিশু সিদ্দিকের বাবা অনেক খোঁজ করেও তাকে পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। জিডি হওয়ার পর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ।

বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন!

সাভার থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় এসে তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে অপহরণ করেন স্বামী পিযুষ পাল। এরপর শিশুর ছবি তুলে নিজের সন্তান বলে দাবি করে অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেন তারা। রিদ্ধিতা পাল লেখেন, তার বাসায় কাজ করেন এমন এক নারী স্বামী পরিত্যক্তা। সেই নারীর বাচ্চাকে ২লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেয়া হবে। এরপর সুজন সুতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করেন। এই সময়ে রিদ্ধিতা পাল নিজের ছেলে প্রনিল পালের ছবি সুজন সুতার কাছে পাঠিয়ে বলে, ‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কি না বলেন।’ ছবি দেখে সুজন সুতার শিশুটিকে পছন্দ করে এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নিবে বলে জানান। পরে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও আসামী পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দিয়ে তার বাসার কাজের মহিলার শিশু হিসেবে অপহৃত সিদ্দিককে একটি স্ট্যাম্প তৈরি করে হাত বদল করে। এ সময় প্রমাণ স্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেওয়া হয়।

গ্রেফতার পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, অপহরণকারী চক্রটির মূল হোতা পীযূষ কান্তি পাল পঞ্চগড় জেলার সদর থানার রমেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে। পীযূষ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালে পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পার্লার-স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। এ সময় রিদ্ধিতা পালের সাথে পরিচয় হয়। পরে তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে তিনি মানবপাচারের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০২২ সালের মে মাসে তার নামে বনানী থানায় মানবপাচারের অভিযোগে একটি মামলাও হয়। সেই মামলায় কিছু দিন জেল-হাজতে থাকার পর জামিনে বের হন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com