ঢাকা : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাক্ষুধা এতটাই তীব্র যে তারা সারাদেশকে গোরস্থান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। আওয়ামীলীগের ‘টপ টু বটম’ নেতাকর্মীদের ভাষা একগুয়েমি গুন্ডাসন্ত্রাসীদের মতো।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো মূল্য নেই। এরা অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রভু হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেই কারণেই বিরোধীদলের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করার জন্য নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সাজিয়েছে। আর তারই প্রতিফলন বিএনপিসহ বিরোধীদলের কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লাঠিয়ালের মতো তাদের আক্রমণ।
বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকালের প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো তিনি নানা ধরনের ফন্দি করে আবারো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুনির্বাচনে বিশ্বাসী নন। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তার জমিদারিতে কেউ অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেউ দাবি করলেই তিনি ক্ষুদ্ধ ও বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অন্যান্য দাবিসহ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের বিএনপির সাগরসম মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাল চোখে দেখেননি। এতো মানুষের সমাগম দেখে তার অন্তরজ্বালা বাড়তে থাকে। এই জন্য তিনি তার বাছাই করা আইনশৃংখলা বাহিনীকে দিয়ে গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করান। বিএনপির সমাবেশকে পণ্ড করায় আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কারণেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আরো বেশি বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। তারা মরণঘাতি অভিযানে আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘২৮, ২৯ ও ৩১শে অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা হত্যার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। গতকালকের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিবেকহীন পুলিশ বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর আওয়ামী পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলেছে সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যা কথা বলেছেন সারা জাতির সামনে। অথচ দেশবাসী এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে সেটাকে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছে যে মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। এইভাবে দেশবিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থারা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল। আওয়ামীলীগ শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আক্রমণ ও জখম করে হতাহত করছে না; খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে।’
শেখ হাসিনা গনতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তিনি ‘ডান্ডালীগ’ গড়ে তুলেছেন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘আইনশৃংখলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ একযোগে ‘ডান্ডালীগ’ হিসেবে কাজ করছে। এরাই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুন্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনিগুলো যেন সাধারণ জনগণ জানতে না পারে। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের এক্রিবিশনে মানুষের পেট ভরছে না। বিপুল জনগোষ্ঠী অনাহারে অর্ধাহারে কোনোরকমে বেঁচে আাছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এতটাই বেড়েছে সেটা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়িয়েও আরো উর্দ্ধোগামী হয়েছে। আলুর কেজি ৭০-৮০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। পিঁয়াজের বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। সাতদিন আগে ছিল ১০০ টাকা। আর সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৬৫ টাকা। এইভাবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সারা জাতি হতবম্ভ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপার্জিত পয়সা দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। একবেলা খাবার জোগানোই অসম্ভব হয়ে গেছে। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। কারণ, এই সিন্ডিকেটবাজরা সবাই আওয়ামীলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে। বিএনপির যে সমস্ত নেতা যারা একসময় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন তাদেরকেও ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভিতরে বিএনপি নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভিতরে আটক রাখা হয়। ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছে। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার এখন বিএনপি নেতাকমীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের উপর সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি নেতাদের হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
রিজভী কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর কারাকর্তৃপক্ষের নিপীড়ন ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল এবং গতকাল ও আজ বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে মোট গ্রেফতার হয়েছে ২ হাজার ৫৬৩ জনের অধীক নেতাকর্মী। মোট মামলা ৫৫টির অধিক। মোট আহত ৩ হাজার ৪৩৬ জনের অধিক নেতাকর্মী। মৃত্যু নয় জন যার একজন সাংবাদিক। এছাড়াও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ দিনে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ হাজার ২৮৩ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ৮০টির অধিক।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন উপস্থিত ছিলেন।’