করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ৮৪ শতাংশ পোশাক শ্রমিক

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা : দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৮৪ শতাংশ শ্রমিক করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ খাতের ১৯ শতাংশ শ্রমিক বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ১৬ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মজুরি কম পাবেন।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথভাবে করা ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক একটি জরিপে এই চিত্র উঠে আসে।

বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, আয়, ব্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মজুরি প্রদান ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে জরিপটি পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠান দুটি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের উদ্বেগ কমাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেননি। এ জন্য শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে, শ্রমিকদের উদ্বেগ নিরসনে ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন, রফতানি ও সামগ্রিকভাবে পুরো অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কারখানার মালিকপক্ষ, সরকার, নীতিনির্ধারক ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে সম্মিলিতভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সংগঠন দুটি পক্ষ থেকে বলা হয়, এ জরিপের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোকে শ্রমিকমুখী উদ্যোগ নিতে সহায়তা করা, যা পোশাক শ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় এবং তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের উপর করোনার প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার ক্ষেত্রেও এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ জরিপের অধীনে, সানেম ও এমএফও গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার) কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করছে।

গত ৬ আগস্ট, ১ হাজার ২৭৮ জন শ্রমিকের একটি নির্বাচিত পুলের মধ্যে ফোনে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক। যা সামগ্রিকভাবে এই শিল্পের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন।

জরিপে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনার কারণে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাব এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা ও আগামীতে বেতন বাড়া-কমার সম্ভাবনার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত আসার পর পোশাক শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৬ আগস্ট পরিচালিত এ জরিপে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের কাছে লকডাউনের সময় কাজে ফেরার নির্দেশের ব্যাপারে তাদের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা বাংলাদেশে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।

৬ আগস্ট ৮৩ শতাংশ শ্রমিক বলেন, তারা এর আগের সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। প্রথম সপ্তাহে ৮৯ শতাংশ পুরুষ ও ৮১ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। কাজে উপস্থিত থাকা ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা লকডাউনের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে অসুবিধা বোধ করেননি।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কাজে উপস্থিত থাকা পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের কাজের সময় পরার জন্য মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। তবে কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে তুলনামূলক ইতিবাচক চিত্র পাওয়া যায়। কাজে যোগ দেওয়া উত্তরদাতাদের মাঝে ৭৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন।

মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা বাদে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক জানান, তাদের কারখানায় করোনা সংক্রমণ রোধে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ৪৭ শতাংশের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মনে করেন, অতিরিক্ত পদক্ষেপগুলো সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট ছিল।

আগামীতে কি পরিমাণ মজুরি পাবেন বলে ধারণা করেন জানতে চাইলে ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা প্রায় একই ধরনের মজুরি পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন। ১৯ শতাংশ জানান তারা এ ব্যাপারে অনিশ্চিত। ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানান তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মজুরি পাবেন বলে ধারণা করছেন।

১ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মজুরি পাওয়ার প্রত্যাশা করেন, যাদের মধ্যে প্রায় সবাই ওভারটাইম কাজ করেছেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com