স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপে দারুণ শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার। ব্যাটারদের ডানায় ভর করে উড়ছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড সংগ্রহ। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই চিত্র। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে প্রোটিয়ারা। সেমির দৌড়ে এবার বাভুমাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। ম্যাচটি ডাচদের জন্য যেমন হারের শেকল ভাঙার, তেমনি টিকে থাকারও। ডি কক-মার্করামদের কাছে জয়রথে আরও এগিয়ে যাওয়ার।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে মুখোমুখির আগে আসরে দুটি ম্যাচে অংশ নেয় নেদারল্যান্ডস। দুটিতেই ব্যর্থ। জুটি বড় করতে না পারা কিংবা বোলারদের ব্যর্থতায় এখনও জয় অধরা। হারের ক্ষত মুছতেই তাদের যাত্রা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত প্রোটিয়াদের তিনবারের মুখোমুখি হয়। সবকটিতে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিপক্ষীয় ম্যাচেও নেই ভালো বার্তা। সাত ম্যাচের ৬টির ফল তাদের বিপক্ষে। একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত এবং বেশিরভাগ ম্যাচেই বড় হার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে পাশ কাটিয়ে বৈশ্বিক আসরে পা দেওয়া স্কট এডওয়ার্ডস বাহিনী চাইলেই অতীত ফিরিয়ে আনতে পারেন। ধর্মশালার মাঠটিকে রূপ দিতে পারেন ওভালের সুখস্মৃতিতে। স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্মৃতিও। যা এখনও দক্ষিণ আফ্রিকানদের জন্য দুঃস্মৃতি। সেবার ডাচদের বিপক্ষে জিতলেই বিশ্বকাপের শেষ চারে চলে যেতেন বাভুমারা। কিন্তু বড় প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ সময় হেরে যাওয়ার পুরোনো অভ্যাস দেখা মেলে প্রোটিয়াদের। চোকার্স তকমা ঘোচাতে পারেননি তারা। ফের বাভুমাদের হতাশার কারণ হতে পারে ডাচরা।
মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি আজ মনস্তাত্ত্বিক লড়াই উৎরাতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। স্বজাতিদের বিপক্ষে লড়তে হবে তাদের। ডাচদের টপ অর্ডারে লিস্টারশায়ারের ব্যাটার কলিন অ্যাকারম্যান ও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ, মিডল অর্ডারে সমারসেটের স্পিনিং অল-রাউন্ডার রোয়েলফ ফন ডার মারু, ফাস্ট মিডিয়াম বোলার রায়ান ক্লেইন ও ৩৯ বছর বয়সি অভিজ্ঞ ওয়েসলি বার এসি- প্রত্যেকেই দক্ষিণ আফ্রিকান। পরে যারা ডাচ নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। ২০১১ সালেও বারেসি বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। দুইবারই তিনি নেদারল্যান্ডসকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আজ তিনি নামবেন স্বজাতি ভাইদের বিপক্ষে।
ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বেশ। উঁচুনিচু আউটফিল্ড ফিল্ডারদের ইনজুরির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফগান অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানের হাঁটুতে ব্যথা পাওয়া নিয়ে বিরক্তির সুর ছিল কোচ জোনাথন ট্রটের মুখে। হাশমতউল্লাহদের ইংলিশ কোচ শিষ্যদের হারের দায়ভার আউটফিল্ডকে দিয়েছিলেন। আসরে এ মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচ দুটি একপেশে হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে রান খরা থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৬৪ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড।
আজ ব্যাট হাতে ডাচ বোলারদের ভোগাতে পারেন ডি কক। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি তোলা প্রোটিয়া এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার রয়েছেন সেরা ছন্দে। নিজের সেরাটা দিচ্ছেন, এনে দিচ্ছেন দারুণ সূচনা। দলও পাড়ি দিচ্ছে রানচূড়া। দুই ম্যাচে ২০৯ রান তোলা এ ব্যাটার বাভুমাকে নিয়ে ডাচ বোলারদের ওপর স্ট্রিম রোলার চালাতে পারেন। একই সঙ্গে মার্কাম, মিলাররা চাইবেন সুযোগ কাজে লাগাতে। বল হাতে আগুন ঝরাতে প্রস্তুত লুঙ্গি এনগিদি ও কাগিসো রাবাদা। গতির ঝড়ে অজিদের ধসিয়ে দিয়েছিলেন দুজনে।
প্রথম জয়ের দেখা পেতে ডাচদের শুরুটা ভালো করতে হবে। আসরে এখন পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটি বড় করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। অভিজ্ঞ বিক্রমজিৎ সিং ও ম্যাক্স ও’ডাউডের ব্যাট দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি। তবে দলের পক্ষে ফল না এলেও প্রতি ম্যাচে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন অলরাউন্ডার বাস ডি লিডি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট নেন ৬৭ রান। হাত ঘুরিয়ে তোলেন ৪ উইকেট। পরের ম্যাচে ইনিংস বড় করতে না পারলেও এক উইকেটের দেখা পান। ডি লিডের পাশাপাশি ব্যাট হাতে সেরাটা দিতে হবে কলিন অ্যাকারম্যানকে। বিষয়টি মেনে নিয়েছেন অধিনায়ক স্কটও। বলেছেন, ওপেনিংয়ে ভালো একটি পার্টনারশিপের অভাবে আমরা হেরেছি। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে পরের সাতটি ম্যাচে বড় জয় প্রয়োজন। আগামীকালকের (আজ) ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
টানা দুই জয়ে আত্মবিশ্বাসী দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, ‘প্রথম দুই ম্যাচেই একশর বেশি রানের ব্যবধানে জয়, বিষয়টি অবশ্যই অনেক বড় ব্যাপার। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়কে আমি এগিয়ে রাখব। এই জয়ে ছেলেদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা দেখা গেছে। পুরো দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে।’ জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে চান। টার্গেট পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের এগিয়ে নিতে, ‘জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন মূল লক্ষ্য আমাদের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড ভালো। কিন্তু আমাদের অতীত নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজেদের পারফরমেন্সের দিকে নজর রাখতে হবে।