সাতক্ষীরা: দরিদ্র পরিবারের সুখের খোঁজে সৌদি গিয়ে অন্ধ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতক্ষীরার মেয়ে স্বপ্না খাতুন। সৌদি আমির পরিবারের অমানবিক নির্যাতনে দুটি চোখ হারিয়েছেন তিনি। শরীর জুড়ে আয়রনের ছ্যাকার ঘা দগদগ করছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছে না স্বপ্না। তাকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ওয়েজ অনার কল্যাণ বোর্ড। ভুক্তভোগীর পরিবারসহ স্থানীয়রা দালাল চক্র ও নির্যাতনকারী ওই বিদেশিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি অসহায় পরিবারটির ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছে পরিবার।
ভুক্তভোগী স্বপ্না খাতুন জানান, দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় দলাল আশাশুনি এলাকার আল মামুনের (চিকু) মাধ্যমে সৌদি আরবে বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতে যান স্বপ্না খাতুন। ঢাকার বনানী এলাকার নাওভিশন এজেন্সির মাধ্যমে তিনি সৌদি আরব গিয়েছেন।
সৌদি আরবে রিয়াদের আলহাদি গ্রামের ১৩ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসায় মাকসুদ আলমের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। স্থানীয় দালাল চিকু সৌদি আরবের খাদিজা নামের এক নারীর কাছে পাঠায় তাকে। দেড় মাস ভাল ভাবে কাটলেও পরে গৃহকর্ত্রীর হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্ধত্ব আর পঙ্গুত্বকে সঙ্গী করে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। বাড়ি এনে তাকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরিবারের অভিযোগ সেখানেও তার চিকিৎসা হয়নি।
স্বপ্না আরও জানান, ডাক্তাররা বলেছে, তার আরও উচ্চতর চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যদি তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলেই সে আবার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবে।
স্বপ্নার মা আশুরা বেগম জানান, ফিরে আসার পর দালাল চক্রের দেখা মেলেনি। এদেশের দালালসহ সৌদি আরবের ওই নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
স্বপ্নার বাবা আমিনুর সরদার জানান, বিদেশে আর কোনো মেয়ে যেন তার মেয়ের মত নির্যাতনের শিকার না হয়, এটাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আকুল আবেদন।
স্থানীয় বুধহাটা বাজার কমিটির সেক্রেটারি নুরুজ্জামান জুলু জানান, স্বপ্না খাতুনের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে তার চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে প্যারালাইজড হয়ে পড়েছে। সে যাতে উন্নত চিকিৎসা পেতে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন জুলু।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ডাবলু জানান, তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ক্ষতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এ দিকে, স্বপ্নাকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দিতে তার কাছ থেকে সই নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়ক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন রশিদ।